May 4, 2024, 10:27 pm

তথ্য ও সংবাদ শিরোনামঃ
যশোর পরকীয়া রহস্য প্রেমিকার পরিকল্পনায় খুন, অবশেষে গ্রেফতার দুই। আনোয়ার হোসেন।নিজস্বপ্রতিনিধিঃ পরীক্ষার খাতায় মার্কস বেশি পেতে যৌন সম্পর্কের প্রস্তাব শিক্ষিকার। যশোর ও নড়াইল মহাসড়কের পিচ গলার ঘটনার তদন্তে দুদক। আরজেএফ’র উদ্যোগে বিশ্ব মুক্ত গণমাধ্যম দিবস পালিত। নারায়ণগঞ্জের বন্দরে সাংবাদিক বাদলকে হুমকি ও অপপ্রচারের বিরুদ্ধে ৩ জনকে আসামী করে অভিযোগ ভালুকায় পথচারীদের মাঝে পানি ও স্যালাইন বিতরণ। এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার রেজাল্ট ১২ মে রবিবার। ভালুকায় মে দিবস উপলক্ষে আলোচনা সভা ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত। ভালুকায় তীব্র তাপদাহে সর্বসাধারণের মাঝে পানি ও খাবার সেলাইন বিতরণ। আইবি বাংলো’র অর্থ আত্নসাতকারী সাইফুজ্জামান চুন্নু ধরাছোঁয়ার বাইরে বেনাপোলে বাস চাপায় নিহত ১ গুরুতর আহত ১। যশোরের অভয়নগর উপজেলায় ইজিবাইক ছিনতাইয়ের সময় স্থানীয়দের পিটুনিতে একজনের মৃত্যু। রাজশাহী মহানগরীর কুখ্যাত মাদক সম্রাট রাব্বি খাঁ আটক ভালুকায় বৃষ্টির জন্য ইসতিসকার নামাজ আদায়। পটুয়াখালীর রাঙ্গাবালী উপজেলার নিজকাটা খালে ভাসছে টর্পেডোর আকৃতির একটি বস্তু। জার্নালিস্ট ইউনিটি সোসাইটি (জেইউএস) এর প্রকাশিত “ত্রিমোহনা” সহ নিজের লিখা ও সম্পাদিত বেশকিছু ব‌ই মাননীয় মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রীকে উপহার দিলেন। ত্রিশালে ডাকাত দলের তিন সদস্য আটক। বেইলি রোড অগ্নিকাণ্ডে নিহতদের স্মরণসভা ওঅসচ্ছল পরিবারের মধ্যে আর্থিক সহায়তা বিতরণ। টংগিবাড়ী বাজারের পাশে ময়লার ভাগার ঝুঁকিতে পরিবেশ ও জনসাস্থ্য। টংগিবাড়ী উপজেলা প্রশাসন কতৃক তীব্র তাপদাহে সুপেয় পানির ব্যাবস্থা। বেনাপোল বন্দরে খালাসের অপেক্ষায় ভারত থেকে আমদানিকৃত ৩৭০ টন আলু পচন ধরতে শুরু করেছে। ভালুকায় তীব্র তাপদাহে সর্বসাধারণের মাঝে পানি ও খাবার সেলাইন বিতরণ। ভালুকায় দ্বিতীয় বিয়ে করায় ছেলের আঘাতে বাবার মৃত্যু। তীব্র গরমে খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে খাবার সেলাইন বিতরণ করলেন ওসি কামাল। ভালুকায় ইউপি চেয়ারম্যানের বিচার দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল ও মানববন্ধন স্মারক লিপি প্রদান। ঈদগািঁও উপজেলা নির্বাচনে তিনটি পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করেছেন ১৭ জন প্রার্থী। ময়মনসিংহে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ভালুকা মডেল থানা শ্রেষ্ঠত্ব। ভালুকায় ল্যান্ডমার্ক সিটি পার্টি সেন্টার উদ্বোধন। যশোরে ইরি (বোরো)ধানের বাম্পার ফলন, কৃষকের মুখে হাসি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল পুলিশের কার্যক্রমে অপরাধজনক কোন ঘটনা ঘটেনি ময়মনসিংহ শিল্প এলাকায়।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাঁথা।

শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ, একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার বীরত্ব গাঁথা।

দিনটি ছিল ১০ ডিসেম্বর ১৯৭১ শুক্রবার ভোর রাত। পাবনা জেলাধীন সাঁথিয়া থানা, বর্তমান আতাইকুলা থানার শোলাবাড়ীয়া গ্রামের ব্রিজ সংলগ্ন যুদ্ধ সংগঠিত হয়। (তথ্য সূত্র: মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সাঁথিয়া উপজেলা কর্তৃক প্রকাশিত স্বরণিকা ১৯৯৮, লেখা তৎকালীন কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মোঃ আবতাব উদ্দিন)। উক্ত শোলাবাড়ীয়া ব্রিজের যুদ্ধে শহীদ হন বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ ও তাঁর ভাতিজা বীর মুক্তিযোদ্ধা শামসুর রহমান ও গ্রামবাসী আব্দুর রহমান।

শহিদ মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখের শহীদ হ‌ওয়ার ৬ দিন পরে ১৬ ডিসেম্বর-১৯৭১ মুক্ত হল দেশ, স্বাধীন হল বাঙালি, জন্ম হল বংলাদেশ নামে একটি দেশ। চারিদিকে প্রকম্পিত হল জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু প্রতিধ্বণি।

মাধপুর হাইওয়ে থেকে চরপাড়া হয়ে গাঙ্গহাটি হাইওয়ে পর্যন্ত রাস্তাটির নামকরণ করা হয়েছে শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ সড়ক। মাধপুর শেখ হাসিনা উচ্চ বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে বর্তমান সরকার শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখকে স্বরণিয় বরনীয় করে রাখার জন্য ২০২১ সালে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি সংরক্ষণ করে রাখার জন্য “শহিদ বীর মুক্তিযোদ্ধা স্মৃতি স্তম্ভ” স্থাপন করে। যা সমাপ্ত হয় মার্চ ২০২৩। তাঁর স্মৃতিতে মুক্তিযুদ্ধের উপর একটি লেখা ইতিহাস বই রচিত হয়েছে “শহিদ সিহাব উদ্দিন শেখ ও আমাদের স্বাধীনতা”।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিহাব উদ্দিন শেখ এর শহীদ হ‌ওয়ার দিনটিতে যা ঘটেছিল। ঘড়ির কাঁটা তখন রাত ১২ টা ৩০মিনিট ১০ ডিসেম্বর-১৯৭১ গ্রামটি ঘিরে ফেলে পাক হানাদার বাহীনী। কালো ঘুট ঘুটে অন্ধকার ঘন কুয়াসার চাদরে ঢাকা শীতের রাত। হঠাৎ বুটের আওয়াজ দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ, ঝাঁজালো কন্ঠস্বর, দরজা খোলা হলো, ঘড়ে প্রবেশ করল ৫/৬ জন রাজাকার আলবদরসহ পকিস্তান হানাদার বাহিনী। পাশের ঘরে ঘুমানো ছিল শহীদ সিহাব উদ্দিনের মেঝ ছেলে বাহার। বাহার খুব চতুর চটপটে, চঞ্চল প্রকৃতির বয়স ৭ বছর ৩য় শ্রেণীর ছাত্র। সাদা পোশাকধারী একদল রাজাকার তাকে ধরে বাহিরে নিয়ে যায়। বাড়ীর পাশের রাস্তায় নিয়ে অনেক প্রশ্ন করে। বাহার ঐ ব্যক্তিকে চিনতে পেরেছিলেন। বাহারের নিকট থেকে কোন কথাই বের করতে পারেনি তারা। বাড়ীর সকল শিশুকেই মুক্তিযুদ্ধ প্রসঙ্গে অবহিত করা হয়েছিল। তাদেরকে ঐ ভাবেই প্রশিক্ষণ দেওয়া ছিল। অপর ঘর থেকে বের করা হল ভাতিজা আনছরকে, তাকে ধরে নিয়ে আসা হল। তাকে জিজ্ঞাসা করা হল তোদের বাড়ীতে বন্দুক কোথায়, তোর চাচা সিহাব কোন ঘরে থাকেন, এমন সব কথা। আনসারের একই কথা জানি না। আনসার এর বয়স ৯ বছর। বোঝে কম, রাগী সভাব, সে রেগে গিয়ে বলেন আপনারা আমাকে ছেড়েদেন, নইলে বলেই এক রাজাকারের মুখে থুথু ছিটিয়ে দেয়। এমন সময় তাকে বন্দুকের বাট দিয়ে সজোরে আঘাত করলে সে চিৎকার দিয়ে উঠে। আবার থুথু ছিটিয়ে দেয় রাজাকারদের মুখে। তখন আনছারকে চরম ভাবে প্রহার করতে থাকে। আনসার তবুও কোন উত্তর দেয়নি। এমন সময় সিহাব উদ্দিনের পিতা এছের শেখ চুপ না থেকে ঘরের ভিতর হতে বেড় হয়ে এসে বলেন কাপুষের দল পারলে আমাকে আঘাত কর, শিশুদের নয়। শিশুদের সাথে তোমাদের কোন শত্রতা নেই। শত্রতা থাকলে আমার ছেলে সিহাব এর সাথে রয়েছে এদের সাথে নয়। তখন তারা আনসারকে ছেড়ে দিয়ে সিহাব উদ্দিন এর পিতা বৃদ্ধা এছের শেখকে ধরে ফেলেন। তাকে বেঁধে রাখেন। এদিকে সিহাব উদ্দিনকে না পেয়ে পাকিস্তানি হানাদর বাহিনী রাগান্বিত হয়ে বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিতে বলেন। সাথে সাথে জেলা আলবদর কমান্ডার সাঁথিয়া ফকিরবাড়ীর সাত্তার রাজাকার ও বাবলু রাজাকার বাড়ীতে আগুন জ্বালিয়ে দেয়।

একটি করুন চিত্র ধরণ করে সেই সময়ে। বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ এর স্ত্রী ঘর থেকে বের হয়ে তিন সন্তান ও মেয়েকে নিরাপদে রাখতে গিয়েছিলেন, এরপর ছোট ছেলেকে নিয়ে যাবেন। এমন সময় তিনি দেখেন ঘর আগুনে পুড়ছে। সে হতভম্ভ হয়ে আগুনের লেলিহান শিখার দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার ২ মাস দশ দিনের সন্তান আগুনে পুড়ছে। কিন্তু বিধির বিধান, কখন যে রাজাকার বাবলুর মাইর খেয়েও কাজের ছেলে ১২ বছরের সফর আলী আহত শিশুটির মাথায় আঘাত পেয়েছে দেখে সে দ্রুত শিশুটিকে একটি লেপে জড়িয়ে নিয়ে বাড়ির পাশের একটি ভাং ও উলু বনের মাঝে রেখে আসে। বিষয়টি বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ এর স্ত্রী জানতেননা। সফর আলী তাকে কিছু বলে নাই।

যখন সিহাব উদ্দিন শেখ এর স্ত্রী জানতে পারলো যে শোলাবাড়ীয়া যুদ্ধে তার স্বামী ও ভাসুরের ছেলে শহিদ হয়েছে, কিন্তু শহীদদের দেহ পাওয়া যায়নি। তখন সে কান্না জড়িত কন্ঠে বলল আমার দুধের শিশু তার বাবাকে না দেখলেও পরপারে এক সাথে রয়েছে। এমন সময় সফর আলী বলে, চাচি আমি তো নজরুলকে ঐ বনের মধ্যে রেখে আসছি। তখন দুপুর গড়িয়ে বিকাল প্রায় ৪টা বাজে। দৌড়ে গিয়ে দেখে পোকা মাকর পিপড়ার খাবারে পরিনত হ‌ওয়া সেই শিশুটি বেঁচে আছে।

সে রাতে সমগ্র গ্রাম রাজাকারদের সহযোগীতায় হানাদার বাহিনী ঘিরে রেখেছিল। একজন মানুষও ঘর থেকে বের হতে পারেনি, কেউ প্রকৃতি ডাকে ঘর থেকে বের হয়েছেকি, অমনি তাকেই ধরে বেঁধে রাখা হয়েছে ওহেদ শেখের তালগাছের সাথে। এদের মধ্যে আলী পচন শেখ, হদু শেখ, অহেদ শেখ, নিজম বিশ্বস, খোয়াজ বিশ্বাস, হানেফ শেখ, নিজাম উদ্দিন খাঁ, জব্বার শেখ, জাহের প্রামানিকসহ আরো অনেকে, এদের মধ্যে অনেকেই আজ আর জীবিত নেই। সে কি নির্মম হৃদয়বিদায়ক চিত্র! নিজ চোখে না দেখলে বিশ্বস করা কঠিন। এ যেন চিরুনী অভিযান। তাদের ধারনা মুক্তিযোদ্ধা দ্বারা গ্রামটি পরিপূর্ণ রয়েছে। কিন্তু একজন মুক্তিযোদ্ধাও সেদিন চরপাড়া গ্রামে পায়নি হানাদাররা।

গ্রামবাসীদের বেঁধে রেখে বাড়ীর দামী সিনিস পত্র সোনাদানা রাজাকাররা লুট করেছে, বাড়ীতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে। কয়েক ঘন্টা তান্ডব চালায় ওরা গ্রামে!

নির্মম ভাবে আহত করেছিল গ্রামবাসীদেরকে। বৃদ্ধ এছের শেখ এর চোখের সামনেই তার প্রিয় বসত বাড়ী পুড়ে ছাই হয়েছিল। নির্বাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে থাকলেন জীবনের রক্ত দিয়ে তার তিল তিল করে গড়ে তোলা নিজ বাড়ী আগুনে পুড়ছে। যখন বাড়ীটি পুড়ে ছাই হয়ে গেল তখন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চলে যেতে থাকে। একজন পাকিস্তানী হানাদার সদস্য কি ভেবে এছের শেখকে ছেড়ে দিয়ে যায়। এছের শেখ জীবন বাঁচাতে দ্রুত সেখান থেকে সরে পরেন।

পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী চলে যাবার পর তিনি পুড়ে যাওয়া ছাই হাতে নিয়ে বলতে থাকেন তোদের আর বেশীদিন নেই এ’দেশ ছেড়ে চলে যেতেই হবে‌। শতবর্ষী এই বৃদ্ধের কথায় সমগ্র বাংলার আকাশ বাতাস প্রকম্পিত হতে থাকে সেদিন। শোলাবাড়ীয়ায় গোলাবারুদের শব্দের সাথে তাঁর আওয়াজ মিলে যেতে থাকে।

চরপাড়া গ্রামে আগুন দেখে গ্যারকার বিলে ওপার থেকে সুজানগর ও পাবনা সদর থানার মুক্তিযোদ্ধাগন একত্রিত হয়ে গ্যারকার বিলে এসে অবস্থান নেয়। তাদের বুঝতে বাঁকি থাকল না যে এ আর কারো বাড়ী নয় ওটা সিহাব উদ্দিনের বাড়ী হানাদারবাহিনী কর্তৃক আক্রমন হয়েছে। পাল্টা আক্রমনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন গ্যারকার বিলে অবস্থানরত বীর মুক্তিযোদ্ধারা। গ্রামের আবাল বৃদ্ধ বনিতা, শিশু কিশোর, নারীদের কথা চিন্তা করেন, গ্রামটি ধ্বংস হয়ে যাবে ভেবে, তারা পাল্টা আক্রমন থেকে বিরত থাকেন।

এ দিকে নন্দনপুর বিজিত মুক্তিযোদ্ধারা পরবতী করনীয় নিয়ে ভাবছে, তারা সাঁথিয়া থানাকে মুক্ত রাখবে বলে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হয়। সিহাব উদ্দিন বলেন, চরপাড়া গ্রামে আমার বাড়ী আক্রান্ত এবং বাড়ীটি পুড়িয়ে দিয়েছে। লছের মাঝী খবর এনেছে আর দেরি নয় এখনি শোলাবাড়ীয়া ব্রিজে প্রতিরোধ করতে হবে। সঙ্গে সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল লতিফ অন্য কোন চিন্তা না করে, অতিদ্রুত সবাইকে সঙ্গে নিয়ে শোলাবাড়ীয়া ব্রিজে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীদের বিরুদ্ধে আক্রমনের জন্য অগ্রসর হন। শোলাবাড়ীয়া ব্রিজের উপর একটি জিপগাড়িতে বসে ছিল কয়েকজন রাজাকার ও পাকিস্তানী বাহিনী। তখন সিহাব উদ্দিন ও সামসুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন ও মুক্তিযোদ্ধ আব্দুল লতিফ তার দলবল নিয়ে উপস্থিত হন উত্তর শোলাবাড়ীয়া গ্রামে। তখন রাত প্রায় সাড়ে চারটার মতো। সিদ্ধান্ত নেয় তিনি শোলাবাড়ীয়া ব্রিজ উড়িয়ে দিবে। সেই মোতাবেক মুক্তিযোদ্ধগন ফসলের জমির মধ্যে দিয়ে ব্রিজের নিচে এসে ডিনামাইট চার্চ করে ব্রিজটি উরিয়ে দেয়। ব্রিজের নিকট থাকা রাজাকার ইসহাক মৌলানা, আব্দুস সোবাহান, মসলেম মোল্লাসহ পাকিস্তাানি হানাদার বাহিনী গাড়ী ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। এই সংবাদ পেয়ে চরপাড়ায় অবস্থানরত রাজাকার ও পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শোলাবাড়ীয়া মহাসড়কের দিকে অগ্রর হতে থাকে। সুযোগ বুঝে মুক্তিযোদ্ধ সিহাব উদ্দিন প্রথমেই গ্রেনেট চার্জ করেন। সাথে থাকেন ভাতিজা সামসুর রহমান। সেই সাথে আবতাব ও লতিফ একইসাথে অতর্কিত আক্রমন চালায়, অবস্থা বেগাতিক দেখে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী শোলাবাড়ীয়া মাঠে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের পাল্টা আক্রমন চালায় হনাদার বাহিনী। তুমল যুদ্ধ শুরু হয়। গ্রামের মানুষ পালাতে থাকেন। গ্রাম শুন্য হয়ে যায়।

অপর প্রান্ত থেকে গ্যারকার বিলে অবস্থানরত মুক্তিযোদ্ধারা আফসার উদিন ও আনিসুর রহমান রবুসহ মুক্তিযোদ্ধাগন যুদ্ধের অবস্থান নির্ণয় করে তারা চরপাড়া ও মাধপুরের মাঝ দিয়ে শোলাবাড়ীয়ার দিকে অগ্রসর হয়ে আক্রমন চালায়। তারা সিহাব উদ্দিন, আবতাব ও লতিফ বাহিনী উপর আক্রমন চালানো দেখে তারা আরও সাহসী হয়ে উঠে। মুক্তিযোদ্ধাদের এই অতর্কিত আক্রমনে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনী দিশেহার হয়ে পরে। মুক্তিযোদ্ধাদের সর্বশক্তি নিয়োগ করেন। তখন এই শোলাবাড়ীয়া ব্রিজের উপর তুমল যুদ্ধ শুরু হয় মুক্তিযোদ্ধা আবতাব বাহিনীর সাথে। এই যুদ্ধে পাকিস্তানি হনাদার বাহিনী পরাজিত হয়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়। এই শোলাবাড়ীয়া ব্রিজের উপর সম্মূখ যুদ্ধে শহীদ হন সিহাব উদ্দিন ও সামসুর রহমান। এলাকার অনেক সাধারণ মানুষ আহত হন। নিহত হন সাধারণ নাগরিক আব্দুর রহমান। কয়েকজন পাকিস্তানি সৈন্য‌ও নিহত হয়।

শহীদ সিহাব উদ্দিন, শহীদ সামসুর রহমানের মৃত দেহ পরবর্তীতে খুজে পাওয়া যায়নি। তাদের শহিদ দেহ কোথায় গেল আজও অজানা রয়ে গেছে। তার সন্তানগন আজও খুঁজেবেড়ায় এবং তার স্ত্রীর প্রশ্ন আমার স্বামীর শহীদদেহ কোথায়? এ প্রশ্নের উত্তর আজও কেউ দিতে পারেনি। এলাকায় কথিত আছে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তাদের শহীদদেহ নিয়ে গিয়ে নগরবাড়ী ঘাটে ভাসিয়ে দিয়েছে। তবে ঐ দিন কয়েক জনের শহীদ দেহ নৌকায় করে পকিস্তানী হানাদার বাহিনী মাঝ যমুনায় ভাসিয়ে দিয়েছিল। তারা হতে পারে এই শোলাবাড়ীর সম্মুখ যুদ্ধে শহিদ হওয়া শহীদদের শহীদ দেহ । এটুকুই তাদের সান্তনা বৃদ্ধ পিতা স্ত্রী সন্তানদের। সেই দিন দুইজন মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হলেন।

শহীদ শিহাব উদ্দিনের বৃদ্ধ পিতা এছের শেখ রাজাকারদের নিকট চিৎকার করে বলেছিলেন তোরা কোন বাবার সন্তান, বাবার সামনে এভাবে অত্যাচার করছ কে, কার কথা শোনে? অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছারা আর কিছুই করার ছিলনা পিতার। সেই যে চোখোর অশ্রু শুকিয়ে অন্ধকার হয়েছে, অন্ধ অব্স্থায় ৯ বছর পর ১৯৮০ সালে ৩০ মে এ পৃথিবী ছেরে চলে জান শহীদ বীর মুক্তিযোদ্ধা সিহাব উদ্দিন শেখ এর পিতা। পুত্র হত্যার বিচার দেখে যেতে পারেননি তিনি।

শহীদ সিহাব উদ্দিনের পরিবারে বৃদ্ধ পিতা এছের শেখ, বড় ভাই চেয়াম্যন মোহম্মাদ আলী শেখ, মেঝ ভাই মোক্তার আলী শেখ, শহীদ শিহাব উদ্দিনের চার ছেলে ও এক মেয়ে, ছেলে হাসিনুর রহমান হাসু ৭১ সালে ষষ্ঠ শ্রেনীর ছাত্র, মেঝো ছেলে বাহানুর রহমান বাহার তৃতীয় শ্রেনীর ছাত্র, আব্দুল হালিম প্রথম শ্রেনীতে পড়া শুনা করে, মেয়ে শিউলি সবে হাঁটাহাটি শিখেছে, ২ মাস ১০ দিনের ছোট ছেলে নজরুল রেখে শহিদ হন।

বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিহাব উদ্দিন শেখ এর সেই আড়াই মাস বয়সী পুত্র সন্তান শেখ নজরুল ইসলাম। দুসস পরিবার এমন একজন বীর পুত্রকে পরিচালক প্রশাসন হিসেবে পেয়ে ধন্য।

একাত্তরের বীর সেনানী বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ সিহাব উদ্দিন শেখ এর প্রতি দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস) পরিবারের পক্ষ থেকে বিনম্র শ্রদ্ধা।

মোহাম্মদ আহসান হাবীব, ব্যাবস্থাপনা পরিচালক, সম্পাদক ও প্রকাশক, দুরন্ত সত্যের সন্ধানে (দুসস)

আমাদের প্রকাশিত তথ্য ও সংবাদ আপনার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করুন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *




All Rights Reserved: Duronto Sotter Sondhane (Dusos)

Design by Raytahost.com